~সিঙ্গেল
আমার বয়ফ্রেন্ড ফেসবুকে শো অফ ব্যপারটা একদমই পছন্দ করে না। যদিও ট্যুর বিয়েতে গেলে দুই একটা এলবাম তার খোলা হয়ে যায় কিন্তু রিলেশনশিপের ব্যপারে সে চরম সংবেদনশীল। তাইতো এত্তবার বলার পর ও "ইন এ রিলেশনশিপ" স্টেটাস দিতে সে নারাজ।
তার ভাষায় যুক্তি হচ্ছে, "বাবু তুমি তো জানো আমাদের প্রেম মারিয়ানা খাতের মতো গভীর, লেভেল এভারেস্টের শীর্ষে, মধুর মতো সুমিষ্ট, অক্সিজেনের মতো প্রয়োজনীয় তুমি আমার৷ এই বিষয় মানুষকে কেন জানাতে হবে? বুলবুলিকে কখনো 'দারুণ গান গাই' সাইনবোর্ড লাগিয়ে ঘুরতে দেখেছ?
যুক্তি অকাট্য। সত্যিই তো। কোনো মানুষ কি তার পরিচয় তার কাজে! প্রোফাইল একটা মানুষকে থোড়াই না জাজ করতে পারে.....!!"
.
একদিন মজা করে একটা ফেইক আইডি থেকে নাফিসকে মেসেজ রিকোয়েস্ট পাঠালাম। লিখলাম, "আমি আপনার কবিতার ফ্যান।"
নাফিস আমার বয়ফ্রেন্ড। যার কথা এতোক্ষণ বলছিলাম। ওর দারুণ ছন্দ মেলানোর প্রতিভাই মূলত আমাকে কুপকাত করেছে। এ ব্যপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই।
ওপার থেকে উত্তর এলো "ধন্যবাদ।"
কয়েকঘন্টা ফর্মাল কথপোকথন হওয়ার পর নাফিস বললো, "আপনি খুব সুইট।"
:তাই বুঝি? কিন্তু কি করে বুঝলেন? প্রোফাইলে তো কার্টুনের ছবি।
:বাহ রে! চেহারা দিয়ে বুঝি মানুষ বিবেচনা করা যায়!
:কি দেখে করা যায়?
:মন দেখে!
:মন দেখেও ফেলেছেন?
:মন তো দেখা যায় না। তবে কথাবার্তায় তার একটা প্রতিফলন পাওয়া যায়।
:তাই বুঝি? তাহলে তো বলতেই হয়, আপনার গার্লফ্রেন্ডের মন খুব ভালো।
নাফিস রিপ্লাই করলো,
"আসিলো না কেউ, দেখিলো না হৃদয়ের যন্ত্রণা।
পাইয়া যাইবে, পাইয়া যাইবে শুনিয়া পাইলাম কেবল মন্ত্রণা।
হইলো না কিছুই, রয়ে গেলাম কেবল একলা,
যদি বিশ্বাস করো, ধরো এ হাত;
হয়ে যাবো আজ দোকলা।।।।।"
নাফিসের প্রতি রাগে গা জ্বলে উঠলো। রিয়েল আইডি তে গিয়ে স্ক্রিনশট গুলো দিলাম।
:নাফি,আপনি একলা?
নাসিফ ফোন দিলো, "বাবু তুমি রাগ করছ? আসলে আমি তো ওভাবে বলি নাই যেভাবে তুমি ভাবছ।"
:ও আপনি কি ভেবে বলেছেন,জানতে পারি?
রাগ হলেই আমার সম্বোধন তুমি থেকে আপনিতে চলে আসে।
:আসলে তুমি তখন অনলাইনে ছিলা না। খুব একা বোধ করছিলাম৷ তাই এমন বলছি।
:আচ্ছা।তারপর?
:রাগ কেন করো? রাগ কইরো না।
নাফিস ছন্দ আওড়ালো,
"প্রিয়তমা তোমার মুখের হাসি,
স্বর্গের চেয়ে বেশি ভালোবাসি
করেছি যে পণ,
চুলোয় যাক পৃথিবী,
ভাঙিতে দিবো না তোমার মন। "
.
আমার বরফ খন্ড সম কঠিন রাগ নিমিষে পানির মতো গলে গেলো।
.
আরেকদিন নাফিস পোস্ট করলো,
"নোবডি:
লিটারেলি নোবডি:
মি টু মাই ফ্রেন্ড: গফ একটা খোঁজ।ভাবী ডাকার ইচ্ছা টিচ্ছা নাই নাকি?"
.
কমেন্টেও দিব্যি সে নিজেকে সিঙ্গেল দাবী করে নানান হতাশা ব্যঞ্জক কথাবার্তা বলছে তার বন্ধুদের কাছে।
দেখেই রাগ ধরে গেলো। দিলাম ফোন।
:মি. নাফি! আপনি সিঙ্গেল?
:এমন কথা বলছ কেন জান?
:আপনি তো ভালোই পোস্ট দিচ্ছেন।
নাফিস রীতিমতো হেসেই ফেললো। মনে হচ্ছে এমন একটা তুচ্ছ কারণে ফোন দিয়ে আমি নিজেই বোকা বনে গেলাম।
নাফিস হাসতে হাসতে বললো,
"ওরে আমার টুনটুনি পাখি,
ছলোছলো করিতেছে আঁখি।
করিও না অভিমান,
তুমিই যে আমার একমাত্র জান।"
.
উপলব্ধি হলো, তা ই তো। ছেলেটা কি একটু মজা ও করতে পারবে না ফেসবুকে আমার জন্য। এত্ত সুন্দর সুন্দর কথাগুলো সে আমাকে নিয়ে বলে। কে পারবে এমন বলতে?
আমিই বা নাফিকে ছাড়া থাকতে পারবো কি ভাবে! সে তো আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।
ক্লাস ওয়ানের টিকটিকির গল্পের ঘড়ির মতো বিষয় সে আমার জীবনে। তাকে ছাড়া সকাল হয় না। দুপুর হয় না। বিকাল হয় না। সূয্যিমামা হাসে না। চাঁদ মামা ডোবে না।
খুবই অপরাধবোধ হতে লাগলো।
লজ্জিতস্বরে বললাম,"নাফি, সরি। আমি ওভাবে বলতে চাইনি। খুব রাগ হয়ে গিয়েছিলো কেন যেন।"
নাফিস সহজ ভঙিতেই বললো,"ধুর পাগলি৷ আমি কিছু মনে করিনি।"
তবুও আমার মন কেমন খুঁতখুঁত করতে লাগলো৷
:নাফি, একটা কথা বলবো?
:বলো।
:কালকে একটু দেখা করতে পারবা প্লিজ?
:দেখা তো চাইলেই করা যায় জনাবা। কিন্তু অধমের মানিব্যাগ যে দৈন্যদশার স্বীকার।
:উফ। মানিব্যাগ দিয়ে কি হবে। ট্রিট আমি দিবো। তুমি আসো তো।
ঠিক হলো পরদিন সকাল দশটায় আমরা দেখা করবো।
যথা সময়ে দেখা হলো। আমরা রিকশা করে ঘুরলাম। গল্প করলাম। সেল্ফি তুললাম।
ডে দিলাম। ক্যাপশন, "আজ উড়বো বলে।"
তারপর গেলাম একটা ক্যাফেতে।ম্যানু কার্ড দিয়ে নাফিকে বললাম, "কি খাবা চুজ করো।"
ডাটা অন ছিলো। ম্যাসেঞ্জারে একটা মেসেজ এলো।
তিতলির টেক্সট'"এটা তোর বয়ফ্রেন্ড? "
তিতলি আমার প্রাইমারি স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড। মাঝখানে যোগাযোগ ছিলো না। কিছুদিন আগে ওর আইডি খুঁজে পেয়েছি।
রিপ্লাই করলাম, "হ্যাঁ। কেমন লাগলো?"
:সে তো আমাকে রীতিমতো পটিয়েই ফেলছিলো।
:মানে?
:আমাদের আগামীকাল দেখা করার কথা ছিলো।
তিতলি কতগুলো স্ক্রিনশট দিলো। তাকে নিয়েও কবিতা লেখা,
"চোখের কোনে যতন করিয়া রাখিছ যে স্বপন,
সুযোগ কি পাইতে পারি, করিতে তা পূরণ?"
.
নাহ আর দেখা যায় না এসব। এরকম নিষ্পাপ চোখের একটা ছেলেকে এভাবে ব্লেম করতেও তো খারাপ লাগার কথা।
নাফি ম্যানু কার্ড থেকে মুখ তুলে বললো, "বাজেট কতো?"
:বাদ্দেও বাজেট। দাও আমি দেখছি।"
ম্যানুটা নিয়ে অর্ডার দিতে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর চলে আসলো খাবার। একটা বার্গার আর সফট ড্রিংকস।
নাফিস সংশয়ের সাথে আমার দিকে তাকালো।
:বার্গার একটা কেন?
:কজ আই এম সিঙ্গেল।
.
.
.
No comments