Header Ads

Header ADS

বিবাহ নৈব চ

 7 little things that reveal a lot about your date on the first meeting |  The Times of India

:না মানে না! আমি বলেছি বিয়ে করবো না তাহলে আমাকে ছেলে দেখতে যেতে হবে কেন? 

:রিদম ছেলেটা ভালো। কখনো কি তোকে বলেছি এর আগে বল? তাছাড়া আমি কথা দিয়ে ফেলেছি। তুই গিয়ে না করে দিয়ে আসিস। 

:কথা দিয়েছ মানে! কাকে কথা দিলা? 

:রেহানা আপাকে।

:রেহানা আপাটা আবার কে? 

:ইয়ে, পাপ্পুর আম্মুর বান্ধুবী! 

:বাহ!! কি দারুণ। মানুষের লতায় পাতায় আত্নীয় হয় জানতাম,তোমার দেখি লতায় পাতায় প্রতিবেশি ও হয়ে উঠছে। 

ভার্সিটির ফাইনাল ইয়ারে উঠার পর থেকেই আশেপাশের আত্নীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশি সবাই যেন জোঁকের মতো লেগেছে আমার বিয়ে নিয়ে! আরে ভাই, আমার পরিবারের এত্ত দুশ্চিন্তা নাই যতোটা তাদের। 

দেখা হলেই,"কি মা আনিকা, ভার্সিটি কেমন চলছে?"আর এর পরের প্রশ্নেই সেই প্রাগৈতিহাসিক মিসাইল,"বিয়ে কবে করছ? হুমম..... দাওয়াত  টাওয়াত কবে পাবো?" আর কি হাসি। উফ!!  গা জ্বালা ধরা হাসি। 

একদিন হুট করে বলেই দিয়েছিলাম,"আন্টি বাসার সামনের ইসলামি বিরিয়ানি তে ১২০ টাকা প্লেট বিরিয়ানি পাওয়া যায়৷ ৩০ টাকা বোরহানি। এই ১৫০ টাকার খাবারের জন্য একটা জীবন নষ্ট করা কি খুব জরুরি?" 

আন্টি কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে ছিলেন। 

আম্মু আমাকে ধমক দিলেন।আর সাবধান করলেন যেন জীবনেও ওনাদের সামনে না যাই। 

অবশ্য এমনিতেও কখনো যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো না।বরং কখনো দুর্ভাগ্য বসত সামনে পড়ে গেলে ওনারা নিজেই উচ্ছাস দেখিয়ে কথা শুরু করতো। 

অবশ্য এর আগেও যে এ ধরণের বিবাহ প্রস্তাব আসেনি, তা না। প্রতিবার ই আম্মু এখন ই না। পরে দেখা যাক বলে সামলে নিয়েছেন। 

এবার হুট করে কি হলো কে জানে! 

.

আম্মু রীতিমতো আকুপাকু করে এমনভাবে বললেন,যেন ব্যপারটির সাথে  আসলেই তার সম্মান জড়িত। বাধ্য হয়ে রাজি হলাম। তবে শর্ত একটাই৷ আমি স্ট্রেট কাট ছেলেকে রিজেক্ট করে দিয়ে আসবো! 

আম্মু বললেন,"ঠিক আছে।" 

দেখা করতে যাওয়ার আগে থেকেই সব স্ক্রিপ্ট করা শুরু করলাম কি কি বলবো। কিভাবে বলবো। 

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে গিয়ে হাসি চলে আসে। 

কি মুশকিল, এভাবে বললে তো ছেলে ভাববে আমি মজা করছি। সিরিয়াসলি নিবেই না। এমন ভাব করতে হবে যেন সপ্তাহে আট দশটা ছেলে রিজেক্ট করা আমার নিত্যকার কাজ। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন। রিয়েলিটি তে তো দূর ফেসবুক ইনবক্সেও মশা তাড়াই। কারণ মশা মেরে ফেললে করার মতো ও কিছু থাকবে না। কিন্তু সে কথা ভিন্ন। 

অবশেষে কাঙ্ক্ষিত দিন এলো, পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটা ক্যাফেতে দেখা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি একাই যাবো৷ এবং আবার তিন দিনের স্ক্রিপ্টেড প্রেক্টিস শো করার আজ ফাইনাল ডে। 

.

ক্যাফেতে গিয়ে চিনতে দেরী হলো না ইনিই রাফায়াত রিদম। বেশ হাসিখুশি ফ্রেন্ডলি চেহারা। আমার দিকে চোখ পড়তেই মিষ্টি একটা হাসি দিলেন। 

:আসুন আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

আমিও খানিকটা তার মতোই হাসলাম। মনে মনে বলছি,'যতোই সুন্দর হাসো,কোনো লাভ নাই। এটা আনিকা ভাঙবে, তবু মচকাবে না' 

:কি খাবেন?

:করেন কিছু একটা অর্ডার। 

রিদম দুইটা ল্যামনেড আর ফ্রেঞ্জফ্রাই অর্ডার করলো। 

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "আপনার কি আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার আছে?" 

রিদম বললো,"প্রাথমিক জিজ্ঞাসা যা দরকার তা আমি আপনার বায়োডাটা তেই পেয়ে গেছি।"

বায়োডাটা!!! ওয়াট দ্যা......... বায়োডাটা কে বানাইলো আবার!! আমার অগোচরে এত্ত রাজনীতি চলে! আর আমি জানিও না! 

:আপনার কিছু জিজ্ঞাসা করার আছে? 

এইত্ত বাবা!!এসেছ পয়েন্টে।এবার আমি পারফর্ম করবো আমার স্ক্রিপ্ট।  

:আমার আপনাকে জিজ্ঞাসা করার কিছু নাই। কিন্তু কিছু বলার আছে। 

:জ্বী বলুন। 

:দেখুন আপনি ছেলে হিসেবে অনেক ভালো,হ্যান্ডসাম, ভালো চাকরি করেন। আপনার লাইফে একটা ভালো মেয়েই আসবে।

:জ্বী। আমিও তা ই আশা করি। 

:সো,আমি বলতে চাচ্ছি,ইউ ডিজার্ভ বেটার।

:আই নো, বাট আম্মু আপনাকে সিলেক্ট করলো।

:আম্মু সিলেক্ট করলো মানে?

:আম্মুর আপনাকেই পছন্দ হলো।

:আপনার কি কোনো নিজস্ব মতামত নেই?

:জ্বী অবশ্যই।  মায়ের পছন্দ এখন আমার ও পছন্দ হয়ে গেলো কি না!!

:হোয়াট!!  চেহারা দেখে মানুষকে পছন্দ মানেই পছন্দ!!  

:মোটেই না। 

:আপনি জানেন আমি কত্ত খারাপ মেয়ে? 

:না তো! জানি না। 

:আমি রাত আড়াইটায় বাড়ি ফিরি।

:তো? 

:আমি স্মোক ও করি। উইড ও নিই। 

:ও আচ্ছা। 

:আফটার পার্টিতেও থাকি। 

:একান্তই আপনার ব্যক্তিগত ব্যপার।  

কেমন বিরক্ত লাগছে,লোকটা এখনো হাইপার কেন হচ্ছে না!! 

:উদারতা!!হুসিয়ারি দেখাচ্ছেন?  

:খারাপ মেয়ে বিয়ে করলে তো এক আধটু হুসিয়ার হতেই হবে। বিয়ের আগের ব্যপার কে জানতে চাচ্ছে!কিন্তু বিয়ের পরের অঘটন যাতে না ঘটে সে দায়িত্ব তো আমার।

:কি অদ্ভুত!!  আপনি কি বুঝতে পারছেন না,আমি আপনাকে বিয়ে করবো না! 

বলেই উঠে যাবার জন্য দাঁড়ালাম।  রিদম বললো,"আনিকা অপেক্ষা করুণ।এভাবে চলে যাওয়া ব্যপারটা অশোভন দেখায়। একসাথে বের হবো। "

ব্যপারটা আসলেই মাথায় আসে নাই। কি করতেছি আমি। নূন্যতম ভদ্রতাটুকুও ভুলতে বসেছি৷ দুইজন একসাথে ক্যাফে থেকে বের হলাম।

রিদম রিক্সা ঠিক করে দিলো।রিক্সায় উঠেই কানের মধ্যে ইয়ারফোন গুঁজে দিলাম।গান চলছে, 

♪ It's you, it’s always you. 

If I ever gonna fell in love I know it's gon'be you. 

It’s you, it's always you. 

Met a lot of people, but nobody feels like you.


হঠাৎ মনে হলো, ছেলেটা খুব একটা খারাপ না, এত্তকিছু বললাম কি সুন্দর সামলে নিলো। স্মোকিং উইডের কথা সম্ভবত বিশ্বাস করেনি। করলে একটা কুৎসিত ঘৃণা নিয়ে কথা বলতো। কিন্তু সে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেছে। মনের অজান্তেই ঠোঁটে হাসি লেগে গেলো। দিনটা পুরোটাই কেন যেন খুব সুন্দর লাগছে। 

বাড়ি ফিরে কলিং দিতেই আম্মু গেট খুলে দিলেন,যেন আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।  

আমি রুমে ঢুকে সোফায় বসলাম। আম্মু জিজ্ঞাসা করলেন,"কি রে,রিদমকে কেমন লাগলো?" 

কিছু বলার আগেই কল এলো আম্মুর ফোনে। আম্মু বললেন, রিদম কল দিয়েছে। 

আমার হার্ট যেন একটা বিট মিস করে ফেললো,হাত কাঁপছে রীতিমতো। ধমনি শিরা উপশিরা গুলো খুব শক্ত করে হার্টটাকে ধরে রাখে। নইলে গলা দিয়ে বেরিয়ে যেতো। 

কি হলো কে জানে,আমি আম্মুর ফোন রিসিভ করে লাউড স্পিকার অন করে দিলাম। 

:আসসালামু ওয়ালাইকুম আন্টি। আমি রিদম। 

এতোক্ষণ এই ছেলেটার সাথে কথা বলে আসলাম একটুও অন্যরকম মনে হয়নি। আর এখন এটুকু আওয়াজ ই যেন আমার ধরণী তোলপাড় করে দিচ্ছে। 

:ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা। ভালো আছ?

:আলহামদুলিল্লাহ আন্টি। আপনার কি খবর? 

:এইতো বাবা। ভালোই। তোমার মা-এর কি অবস্থা?

:আম্মু আছেন ভালো। আন্টি আজ আনিকার সাথে দেখা হলো। খুব ভালো একটা মেয়ে।তবে আন্টি ও সম্ভবত এখনই বিয়ে করতে চাইছে না। কিংবা আমাকে তার খুব একটা পছন্দ হয় নাই। আন্টি বিয়ে যেহেতু দুইজনের ই লাইফটাইম একটা বিষয় সো আই থিংক ব্যপারটাতে দুইজনের মতের ই সমান গুরুত্ব থাকা উচিত।  

:আনিকা কি তোমার সাথে খুব বাজে বিহেভ করেছে? 

:নাহ আন্টি। কথা শুনে মনে হলো,তাই বললাম। আচ্ছা আন্টি রাখি। ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম। 

:ওয়ালাইকুম আসসালাম৷ 

রিদম কলটা কেটে দিলো। কি হলো জানি না। রুম বন্ধ করে দিয়ে মাথায় নিচে বালিশ রেখে খুব কাঁদলাম।  

'ছেলেরা কখনোই মেয়েদের বুঝতে পারে না৷ কক্ষনো না।'

.

.

~বিবাহ নৈব চ

#তুতুরি

No comments

Theme images by lobaaaato. Powered by Blogger.